বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মাকে ৭ বছর পর পেয়ে জড়িয়ে ধরলেন তারেক রহমান। কালের খবর জমি দখলে বেপরোয়া রুহুল আমিন হাওলাদার। কালের খবর মাটিরাঙায় সেনা অভিযানে ১৪ লাখ টাকার অবৈধ সিগারেট জব্দ। কালের খবর দুর্গম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেনাবাহিনীর শিক্ষা উপকরণ বিতরণ। কালের খবর ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় তারুণ্যের উৎসবে বর্ণাঢ্য র‍্যালি। কালের খবর খাগড়াছড়িতে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত। কালের খবর মুন্সিগঞ্জে জাতীয় পার্টির ৩৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত। । ‘এবার টার্গেটে সাংবাদিকদের সন্তানেরা’ চট্টগ্রামের মানববন্ধনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম। কালের খবর ঈশ্বরগঞ্জে হতদরিদ্রের লাখ লাখ টাকা নিয়ে এনজিও উধাও। কালের খবর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব। কালের খবর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব। কালের খবর

মোঃ বাবুল, স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া :

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে ভূমি আইন ২০১০ লঙ্ঘন করে নিয়ম বর্হিভূতভাবে অবাধে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। এতে জমির ফসল উৎপাদনের উপযোগিতা হারানোর পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে শত শত একর ফসলি জমি। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও প্রভাবশালীরা সংশ্লিষ্টতা থাকায় কেউ মুখ খুলছে না।তবে উপজেলা প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা করলেও কোনো কাজে আসছেনা, ঠেকাতে পারছেনা ভুমি দস্যুদের নিয়মিত কার্য্যক্রম। উপজেলায় মোট ২৭ হাজার হেক্টর জমির রয়েছে, এর মধ্য তিন ফসলী জমি রয়েছে ৩৮৬০ হেক্টর। এই তিন ফসলী জমির মধ্যে অন্তত ৫ শত হেক্টর জমি অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে কেটে বিনষ্ট করা হয়েছে। এছারাও শত শত একজ সরকারী খাস জায়গার মাটি কেটে বিক্রি করছে ভূমি দস্যুরা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরে অত্র উপজেলায় কৃষি জমির মারাত্বক সংকট দেখা দেয়ার আশংখ্যা করছেন স্থানীয়রা।
উপজেলায় ২১টি ইউনিয়নে ২১৭টি গ্রাম রয়েছে। এই ২১৭টি গ্রামের বেশিরভাগ স্থানেই এখন মাটি ও বালু খেকো রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীরা বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন।শতাধিক অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে তারা প্রতিনিয়ত কৃষি জমির মাটি লোপাট করছেন। পুরো উপজেলা ঘুরে দেখলে মনে হয়- এ যেন মাটি কাটার মহোৎসব চলছে।
অভিযোগ রয়েছে,ভূমি দস্যুরা কৌশলে কিছু জায়গা ক্রয় করে ডেজারের মাধ্যমে ৩০ থেকে ৪০ ফুট গভিরে গর্ত করে অন্যত্রে মাটি বিক্রি করছে,ফলে আশেপাশের জমি গুলো এমনিতেই ভেঙ্গে পরে,উপায়ন্ত না দেখে নিরীহ কৃষকেরা অল্প টাকায় ওই সমস্ত ফসলি জমি ভূমিদস্যুদের কাছে বিক্রি করতে বাদ্য হয়। প্রতিফুট মাটি বিক্রি করা হয় ১০ থেকে ১৫ টাকা,ফলে অল্পদিনেই ড্রেজার পরিচালনা কারারীরা কোটি কোটি টাকার মালিক বুনে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে প্রায় ২১৭টি গ্রামের কোন না কোন স্থানে ড্রেজার মেশিনে মাটি ও বালু উত্তোলন চলছে। মাইলের পর মাইল পাইপ সংযোগ দিয়ে শ্রেণী পরিবর্তন না করে ড্রেজিংয়ের মাটি দিয়ে পকুর, কৃষি জমি, ডোবা ভরাট করা হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। অবৈধ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কোন কোন তিন ফসলি জমি ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীরে গর্ত করা হয়েছে। এতে আশ-পাশের তিন ফসলের কৃষি জমিগুলোও ভেঙে পড়ে কূপে পরিণত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রছুল্লাবাদ ইউনিয়নের রছুল্লাবাদ গ্রামের পশ্চিম পাড়ার ফসলি জমির মাঠে ও রছুল্লাবাদ বাজারের পূর্ব পাশে বিল্লাল হোসেন নামে এক ভূমি দস্যু দুইটি ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে অন্যত্রে বিক্রি করছে।জগন্নাথপুর টু মোল্লা মাটির সড়কের মোল্লা উত্তর পাড়া ফসলি জমির মাঠে জামান মিয়া,একটি ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি কেটে বিক্রি করা করছে।এ ছাড়াও মোমেন ও মিজান মিয়া, লহরী ফসলি জমির মাঠে,সাদির মিয়া ও বাছির মিয়া রছুল্লাবাদ পূর্বপাড়া ও ইব্রাহিমপুর পশ্চিম পাড়া ফসলি জমির মাঠে,মালেক মিয়া শ্রীরামপুর ফসলি জমির মাঠে,খোকা মেম্বার খাগাতুয়া ও দীর্ঘসাইল ফসলি জমির মাঠে,আনু মিয়া,রকেট মিয়া,শিশু মিয়া যশাতোয়া ও রতনপুর ফসলি জমির মাঠে,আল আমিন,রফিকুল,মামুন মিয়া শাহপুর, ডুবাচাইল ফসলি জমির মাঠে,শ্যামল মিয়া সাতমোড়া ফসলি জমির মাঠে,সিজিল মিয়া,টিটু মিয়া,হানিফ মিয়া, ফুল মিয়া মেম্বার শিকানিকা,চুওরিয়া ফসলি জমির মাঠে,বাশার মিয়া বাঙ্গরা,চেচড়া,চেলিখলা ফসলি জমির মাঠে,বাছির মেম্বার,আব্দুর রহমান,আরমান,সজিব, রনি,শুভ আহম্মদপুর,পাকহাজীপুর ফসলি জমির মাঠে, জিয়াউর রহমান,মিজান মিয়া,সুমন মিয়া,তোফায়েল বাড়িখলা,জাফরপুর ফসলি জমির মাঠে,সুরাপ মিয়া ইব্রাহিমপুর পূর্বপাড়া ফসলি জমির মাঠে,আবেদ মিয়া,জামাল মিয়া,শিবপুর,ইসলামপুর,বাঘাউড়া ফসলি জমির মাঠ,এরশাদ,হানিফ,দুলাল নাটঘর,চড়িলাম ফসলি জমির মাঠে,জামাল মিয়া তার ভাই গুড়িগাঁও, আটিয়ারা পূর্বপাড়া ফসলি জমির মাঠে, ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি কাটা চলছে।
উপজেলার রসুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক জাকির মিয়া,ও একই গ্রামের আলী আকবর, আলমনগর গ্রামের কুদ্দুস মিয়া,কনিকাড়া গ্রামের নুর আহম্মেদ,শ্যাম গ্রামের রুপ মিয়াসহ অন্তত শতাধী কৃষক বলেন, ড্রেজার ব্যবসায়ীরা ড্রেজার বসিয়ে গভীর ভাবে মাটি কাটার কারণে তাদের তিন ফসলি জমি ড্রেজিং গর্তে বিলীন হয়ে গেছে। ৪ বিঘা জমি এখন ১০ বিঘায় পরিণত হয়েছে। এতে কেউ ইচ্ছা করে জমি দিতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত ড্রেজার মালিকদের নিকট কম মূল্যে জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১০ জন কৃষক জানান, ক্ষতিগ্রস্ত অনেক জমির মালিক প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করে। কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। প্রশাসন ও ইউনিয়ন ভুমি অফিসের নায়েবদের ম্যানেজ করেই এই অবৈধ ব্যবসা চলছে। পুরো উপজেলার কৃষকরা এখন ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। তাদের ভয়ে কথাও বলা যায় না। তারা আরও বলেন, অভিযোগ দিলে প্রশাসনের লোকজন আসার আগেই কিভাবে যেন ড্রেজার ব্যবসায়ীরা টের পায়। তখন তারা মেশিনপত্র বন্ধ করে চলে যায়। পরক্ষণে প্রশাসনের লোকজন চলে গেলে তারা আবারও মাটি কাটার উৎসবে মেতে ওঠে।
এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার একরামুল সিদ্দিক জানায়, “স্থানীয়দের অভিযোগে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে। কোনো অবস্থায় ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা যাবে না। যারা এ ধরনের কাজে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com